শহীদ শেখ আবুল কাশেম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক চিত্তরঞ্জন বাইন (৪৫) হত্যা মামলার দু’আসামীকে মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ আদেশ প্রদান করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরিফ মাহমুদ লিটন। তিনি বলেন, আদালত মামলার ১০ জন আসামির মধ্যে দুইজনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আর বাকীদের খালাস দিয়েছেন। এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট বলে তিনি জানিয়েছেন।
মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত দু’আসামী হলেন, নগরীর শেরে বাংলা রোডস্থ আমতলা মোড়ের গফ্ফারের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. ইকরাম মুন্সির ছেলে রাজু মুন্সি ওরফে গালকাটা রাজু (২৪), শেরে বাংলা রোডস্থ আমতলা মাতুব্বর বাড়ির গলির মো. ইকরাম গাজীর ছেলে মো. তুহিন গাজী (২৪)। রায় ঘোষণাকালে আসামী তুহিন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন এবং রাজু মুন্সি পলাতক রয়েছেন। এ মামলার অপর ৮ আসামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, নগরীর জাহিদুর রহমান সড়কের হক সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. হাবিবুল ইসলামের ছেলে মো. আজিজুল ইসলাম (২০), ১০৯ নাজিরঘাট মেইন রোডের ইউসুফ কসাইয়ের ছেলে মো. মাহফুজ হাওলাদার (২০), বসুপাড়া আজাদ লন্ড্রির পাশে বিহারী কলোনীর মোড়ের মিঠু সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত. আব্দুল মান্নানের ছেলে রাসেল ওরফে পঙ্গু রাসেল (২২), নিরালা আবাসিক এলাকার ২নং ক্রস রোডের ইসলাম উদ্দিন শেখের ছেলে শফিকুল ইসলাম সেন্টু (২৪), মিস্ত্রিপাড়া খালপাড় রোডস্থ রসুলবাগ এলাকার মো. আমির শেখের ছেলে মো. শাওন শেখ (২২), টুটপাড়া মেইন রোডের ঘোষের ভিটার আনোয়ারা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. আব্দুর রব সরদারে ছেলে মো. বাবু শেখ ওরফে ব্লেড বাব ওরফে সুমন (২৩), নাজিরঘাট মেইন রোডের নান্টুর বাড়ির ভাড়াটিয়া সোবাহান শেখের ছেলে মো. সুলতান শেখ (২৬) ও ১০৮ নাজিরঘাট মেইন রোড বাই লেনের মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ (২৫)।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মুরাদ গাজী জানান, চিত্তরঞ্জন বাইন শহীদ শেখ আবুল কাশেম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি খুলনা থানাধীন ৫৯ শেরেবাংলা রোডস্থ আমতলা মোড়ে স্বপরিবারে বসবাস করতেন। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি সকাল ১১টায় চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী লাকী গোলদার তার দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে বটিয়াঘাটায় পিত্রালয়ে যান। প্রতিদিনের ন্যায় পিটিআই মোড়স্থ নিজ নামীয় (চিত্ত স্যারের ব্যাচ) শেষ করে তিনি রাত সাড়ে ১০টায় আমতলা মোড়স্থ বাসায় ফেরেন। ১৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১৫ জানুয়ারি সকাল সোয়া ১১টার মধ্যে যেকোন সময়ে ডাকাতির উদ্যেশ্যে ওই বাসার জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে আসামীরা। এরপর তাকে হত্যা করে হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় তার লাশটি খাটের উপর ফেলে রাখে। ওই সময় ঘরে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য মালামাল (যার মূল্য দুই লাখ টাকা) লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় আসামীরা।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুবোল বাইন বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নং- ১৩ । ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামাল উদ্দিন ১১জনের বিরুদ্ধে আদালতে চাজশীট দাখিল করেন। মামলা চলাকালীন সময়ে মিস্ত্রিপাড়া খালপাড় রোডস্থ শাহাজাহান এর বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. সুলতান শেখের ছেলে মো. মানিক শেখ (২৩) মারা যায়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট আরিফ মাহমুদ লিটন। আসামী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খান মো. লিয়াকত আলী, অ্যাডভোকেট শফিউল আলম সুজন ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ অনেকে।
খুলনা গেজেট/এনএম